মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

বাঘায় ‘পলিনেট হাউসে’ পরীক্ষামূলক ক্যাপসিকাম চাষে লাভের সম্বাবনা

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:: প্রথমবারের মতো এবছর ক্যাপসিকাম ফসলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে রাজশাহীর বাঘায়। পরীক্ষামূলক এর চাষাবাদ শুরু করেছেন জেলার বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম রুমন। ক্যাপসিকাম চাষে অধিক লাভের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তার ফসল দেখতে আসছেন অন্য কৃষকরাও। খুব বেশি মানুষ ক্যাপসিকাম নামে না চিনলেও যদি ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ বলা হয় তাহলে সবাই চিনবেন।

আমিনুল ইসলাম রুমন জানান, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত ‘পলিনেট হাউসে’ ২৫ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করেছেন। গত অক্টোবরে হুলুদ, সবুজ ও বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের চাষাবাদ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। চারা লাগানোর প্রায় তিন মাসের মাথায় ফল পেতে শুরু করেন। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন। আরো ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। পাইকারি দরে হুলুদ রঙের মরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, সবুজ রঙের ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বেগুনি রঙের মরিচ বিক্রি শুরু হয়নি। বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ কেজি উৎপন্ন হতে পারে। তিনি জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় চাষাবাদ বিষয়ে ধারণা নিয়ে নির্মিত পলিনেট হাউসে চাষাবাদ শুরু করেন। পলি শেডটিতে, বিদুৎচালিত ড্রিপ ইরিগেশনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, এই ফসলের উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি মরিচে ১.২৯ মিলিগ্রাম আমিষ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৮৭০ আইহউ ভিটামিন এ, ১৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.০৬ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৩ মিলিগ্রাম রিভোফ্লেভিন এবং ০.৫৫ মিলিগ্রাম নায়াসিন রয়েছে। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ’সি’ রয়েছে বলে সংশ্নিষ্টরা জানান। মাছ, মাংস, সবজি, সালাদ সব কিছুতেই এর ব্যবহার রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ঝুরঝুরে বেলে দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত। ভাদ্র ও মাঘ মাসে বীজ বপন করলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। শতক প্রতি ১ গ্রাম বীজ লাগে। চারা তৈরির জন্য বীজগুলোকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগের তৈরি করা বীজতলায় ১০ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হবে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য নিচের দিকে ছিদ্রযুক্ত একটি টব বাছাই করতে হবে। টবের মাটির সঙ্গে এক-তৃতীয়াংশ জৈব সার মেশাতে হবে। চারা একটু বড় হলে শক্ত খুঁটি দিতে হবে যাতে হেলে না পড়ে যায়। আগাছা থাকলে সাবধানে তুলে ফেলতে হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এ অঞ্চলে এটিই প্রথম চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলায় এর চাষাবাদ বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। লোহার পাইপের খুঁটির উপরে পলিথিন দিয়ে তৈরি ‘পলিনেট হাউস’ এ শীতের সবজি গরমেও চাষ করতে অসুবিধা হয় না। অর্থাৎ পলিনেট হাউসে সারা বছরই সবজি এবং ফুলের চাষ করা যাবে। ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, হাসানুজ্জামান বলেন, এর পুষ্টিগুণ বেশ ও লাভজনক ফসল। এটি অভিজাত হোটেল ও ফাস্টফুড-সহ বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের জনসাধারণকেও মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিদেশে রপ্তানীর সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। আধুনিক প্রযুক্তির পলিনেট হাউস পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে অন্তত ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। নতুন ধরনের এই ফসল বাজারজাতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে যাবে। সম্প্রতি প্রকল্পের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ছায়েদুজ্জামান, (অতিরিক্ত সচিব, পরিকল্পনা কমিশন), মাহবুবুল হক পাটোয়ারী (অতিরিক্ত সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়), সাইফুল ইসলাম, (মহাপরিচালক, যুগ্ম সচিব), আইএমইডি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ফেরদৌসী আখতার (যুগ্ম প্রধান (যুগ্ম সচিব), পরিকল্পনা কমিশন), এনামুল হক, (যুগ্ম সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়), নুসরাত নোমান, (যুগ্মপ্রধান,পরিকল্পনা কমিশন)।

পরিদর্শন টিমের সাথে উপস্থিত ছিলেন, মোজদার হোসেন, (উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী); মোঃ হাসানুজ্জামান, (প্রকল্প পরিচালক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প)।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution