শুক্রবার, ০২ Jun ২০২৩, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

বাইসাইকেলে ৬৪ দিনে মাহাথিরের দেশ ভ্রমণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। প্রতিটি মানুষ স্বপ্নকে ঘিরেই তার জীবনটাকে সামনে এগিয়ে নেয়। আর এ স্বপ্ন দেখা শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই। যেমনটা দেখেছিলেন খুলনা সাইক্লিস্টের সদস্য মাহাথির মোহাম্মদ অথৈ (১৮)। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন বাইসাইকেলে করে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করবেন তিনি। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার।

নগরীর সোনাডাঙ্গার সবুজবাগের বাসিন্দা মাহাথিরের বাবা যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম গোলাম আযম। ‘সাইকেল চালাই, দূষণ কমাই’ এই স্লোগানে গত ৪ জানুয়ারি খুলনা থেকে সাইক্লিং করার উদ্দেশ্যে বের হন মাহাথির। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বাগেরহাট হয়ে খুলনা সার্কিট হাউজে এসে ৬৪ জেলায় তার বাইসাইকেল ভ্রমণ শেষ হয়। এতে তার সময় লেগেছে ৬৪ দিন।

দেশব্যাপী সাইক্লিং করার সময়ে সে প্রতিটি জেলাতে সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে দূষণ কমানো যায় এ ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে অবহিত করেন এই সাইক্লিস্ট। তার সাইক্লিং চলাকালীন দেশের বিভিন্ন সাইক্লিংগ্রুপ তাকে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছে। একইসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসগুলো তাকে রাতে থাকার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে।

মাহাথির বলেন, আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি, তখন থেকেই সাইক্লিং আমার খুব ভালো লাগত। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমি সাইকেলে করে ঘুরেছি। স্বপ্ন ছিল দেশটাকে ঘুরে দেখব। পরিবেশ দূষণের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করব। এ জন্য আমি একটা স্লোগানও দিয়েছি ‘সাইকেল চালাই, দূষণ কমাই’। সাইকেল নিয়ে সবখানে যাওয়া সম্ভব এবং দূষণটাও নিম্ন পর্যায়ে রাখতে পারি। এই ম্যাসেজটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং দেশটাকে নিজের চোখে দেখা।

যাত্রা শুরু এবং শেষের অনুভূতির বিষয়ে মাহাথির বলেন, দেশটাকে দেখতে যাচ্ছি এবং দেশের জন্য কিছু করতে যাচ্ছি। একটা অনিশ্চিত যাত্রা নিয়ে বের হয়েছিলাম। যখন শেষ করলাম তখন মনে হলো নিজের দেশটাকে দেখলাম। দেশের মানুষ অনেক ভালো। অনিশ্চয়তার কিছু নেই। নিরাপদ যাত্রা সম্ভব।

খুলনার আযমখান কমার্স কলেজের মার্কেটিং বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাথির বলেন, যেহেতু করোনার কারণে কলেজ বন্ধ এবং অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ ছিল, সেহেতু আমার লেখাপড়ার তেমন ক্ষতি হয়নি। আর অনলাইনে ক্লাস করতে পেরেছি। পরিবারের সম্পূর্ণ সাপোর্ট পেয়েছি।

মাহাথির আরও বলেন, বিভিন্ন জেলায় গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা আমাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছেন, বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। মানুষের সঙ্গে মিশেছি। অন্যরকম কেটেছে দিনগুলো। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের সড়কগুলোতে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলে। খাগড়াছড়ির আলু টিলা নামক স্থানে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। একটি বাস হঠাৎ হর্ন না বাজিয়ে ও সাইড না দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে আসে। আমি মাটিতে নামিয়ে দিয়েছিলাম সাইকেল। তখন কিছুটা ব্যাথা পেয়েছি।

দেশ ভ্রমণের অনুভূতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশটা আসলেই অনেক সুন্দর। দেশ নিয়ে জীবনানন্দ দাশের লেখা সব কিছুই সঠিক। দেশকে নিয়ে তিনি যা লিখেছেন, সবই সত্য। ঘুরে না দেখলে বোঝা যাবে না, কতো সুন্দর আমার দেশটা।

মাহাথিরের মা মনিরা বিল্লাহ্ বলেন, প্রথম দিকে নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু ভাবলাম দেশ ঘুরবে, এটা সম্মানের। ভালো কাজে যাচ্ছে। তাই উৎসাহ যোগাতাম। প্রতিদিনই ফোনে কথা বলতাম, ভিডিও কলে কথা হতো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ১২ দিন আগে ছেলের জন্য কেঁদে ফেলেছিলাম। ছেলে বাড়ি ফেরার পর সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বাসায় এসেছে। সে সাইকেল নিয়ে দেশ ভ্রমণ করেছে এবং পরিবেশ দুষণের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করেছে। বিষয়টি আমার খুবই ভালো লাগছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution