শুক্রবার, ০২ Jun ২০২৩, ০২:৩২ অপরাহ্ন

নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ইতিহাস গড়লো

স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠ অনলাইন:: নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। আজ সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে চারবারের ফাইনালিস্ট নেপালকে উড়িয়ে ৩-১ গোলে দিয়ে প্রথমবার সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।

পুরুষ ও নারীদের সাফের ইতিহাসে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ১৯ বছর আগে ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। তারও আগে ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) ফুটবল ইভেন্টে এই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই নেপাল জাতীয় পুরুষ দলকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। আজ সেই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক দর্শককে নিস্তব্ধ, নিঃসাড় করে দিয়ে লাল-সবুজের কেতন উড়িয়েছে সাবিনা-কৃষ্ণারা। হয়েছে নারী সাফের নতুন রানী।

এমন জয়ে বাংলাদেশের হয়ে জোড়া গোল করেছেন শ্রীমতি কৃষ্ণা রানী সরকার। অপর গোলটি করেছেন সুপার সাব শামসুন্নাহার জুনিয়র। অবশ্য দেশের ক্রিকেট ও ফুটবলের খারাপ সময়ে তাদের এই শিরোপা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রীড়ামোদি মানুষের জন্য দারুণ কিছু। এ অর্জন নিঃসন্দেহে অসামান্য।

অবশ্য নারীদের সাফ ফুটবল মানেই ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য। আগের পাঁচ আসরে পাঁচবারই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। বাংলাদেশ ফাইনালে খেলে মোটে একবার। তাও ২০১৬ সালে। নারী ফুটবলে বছর তিনেক আগেও ভারতের সাথে বাংলাদেশ দলের দূরত্ব ঢাকা-দিল্লির মতোই ছিল। কিন্তু এবারের আসরে সেই দূরত্ব কমিয়ে আনে বাংলাদেশের মেয়েরা। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে আসে গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। যা ছিল ভারতের বিপক্ষে ১২ বছরের চেষ্টায় ১১তম মুখোমুখিতে প্রথম জয়। আর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে ভারতের মেয়েদের প্রথম হার।

অবশ্য বাংলাদেশ নারী ফুটবল মানেই তারুণ্যের জয়গান। বয়সভিত্তিক দলে তারাই এনে দিয়েছে একাধিক সাফল্য। জাতীয় দলের হয়ে ছিল ব্যর্থতার মিছিল। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের হয়ে যারা ফাইনাল খেলেছিল। তারা এখন আরও পরিণত, আরও অভিজ্ঞ। তাদের পারফরম্যান্সে ভর করেই বাংলাদেশ গড়েছে ইতিহাস।

ফাইনালের শুরু থেকেই নেপালের ওপর চাপ প্রয়োগ করে খেলে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাতে সুযোগ পেয়ে যায় প্রথম মিনিটেই। এ সময় মাঝ মাঠ থেকে দৌড়ে এসে ডি বক্সের বেশ খানিকটা সামনে বল পেয়ে যান মারিয়া মান্ডা। সঙ্গে সঙ্গে গোলমুখে শট নেন মান্ডা। নেপালের গোলরক্ষক আনজিলা তুম্বাপো সুব্বা ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন।

সেমিফাইনালে ইনজুরিতে পড়া এবারের সাফে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সিরাত জাহান স্বপ্নাকে নিয়েই একাদশ সাজিয়েছিলেন ছোটন। কিন্তু চোট আক্রান্ত স্বপ্না দশ মিনিটের মাথায়ই মাঠ ছাড়েন। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। ম্যাচের ১৩ মিনিটেই সুপার সাব শামসুন্নাহারের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ সময় ডান দিক থেকে মনিকা চাকমার ক্রস ডি বক্সের মধ্যে পেয়ে যান তিনি। এরপর আলতো শটে জালে জড়ান বল।

৩৭ মিনিটে অবশ্য গোল শোধের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল নেপাল। এ সময় ফ্রি কিক পায় তারা। ফ্রি কিক থেকে নেপালের নেওয়া শট ডানদিকে ঝাপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিয়ে বাঁচিয়ে দেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জটলার মধ্যে ঘুরতে থাকে পায়ে পায়ে। সেখান থেকে নেপালের খেলোয়াড়ের শটে বল জালে প্রবেশ করতে নেয়। একেবারে গোললাইন থেকে সেটা ক্লিয়ার করেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড়।

৪১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। এ সময় নেপালের খেলোয়াড়ের ভুলে বক্সের সামনে বল পেয়ে যান বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি নেপালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের ফাঁক গলিয়ে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বল দেন কৃষ্ণাকে। কৃষ্ণা বল পেয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন। তার সামনে ছিলেন কেবল নেপালের গোলরক্ষক তুম্বাপো সুব্বা। কিন্তু বাম পায়েয় শটে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জড়ান নেপালের জালে। তাতে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution