বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

বাঘায় পদ্মার ভাঙনের মুখে বিদ্যালয়, ঝুঁকি নিয়ে চলছে ক্লাস

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:: রাজশাহীর বাঘায় আবারো পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। খেলার মাঠজুড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল। আর ৫ মিটার ভাঙলে, পদ্মার কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ক্লাস।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বছরের পর বছর যদি এভাবে ভাঙতে থাকে তাহলে আমরা পড়বো কিভাবে। বিষয়টি উপ পরিচালক রাজশাহী, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দিয়ে আবগত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।

জানা যায়, ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি চকরাজাপুর নামে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ভাঙনের কবলে পড়ায় ২০১৮ সালে কালিদাশখালি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। এর আগেও ২০১২ ও ১৯৯৮ সালে ভাঙনের কবলে পড়েছিল বিদ্যালয়টি। এবারও ভাঙনের কবলে পড়ায় ৪ রুম বিশিষ্ট ২টি ঘর ভেঙে নেওয়া হয়েছে। এতে করে শ্রেণী কক্ষের সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩৭ জন। ১২জন শিক্ষক ও ৬জন কর্মচারি রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, পদ্মার ভাঙন থেকে ৫ মিটার দূরে অবস্থান করছে বিদ্যালয়টি। সরিয়ে নেওয়ার জন্য জায়গা খুঁজছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ ভাঙনের কবলে পড়ে ২০১৮ সালে। পরে কালিদাশখালি গ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে সেখানে তিন রুম বিশিষ্ট একতলা পাঁকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে প্রধান শিক্ষকসহ স্টাফরা বসেন। অপর দুইটিতে দশম শ্রেণীর ও ভোকেশনালের বাংলা-ইংরাজি ক্লাশ নেওয়া হয়। সিক্স থেকে নবম শ্রেণীর ক্লাস চলে টিনের ছাউনি ঘরে।

নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহিনুর জানান, ক্লাস রুম ভেঙে নেওয়ায় শ্রেণী সংকটে ক্লাস বিঘ্নিত হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুহুল আমিন, সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাবন্য খাতুন, সোনিয়া খাতুনসহ অনেকেই জানান, শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় একই বেঞ্চে ৫/৬ জন করে বসতে হয়। এরমাঝে ভাঙনের কবলে পড়েছে বিদ্যালয়টি। এখন কিভাবে, কোথায় পড়বেন, ভাবনায় আছেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে চকরাজাপুর বিদ্যালয় সংলগ্ন বাজারও। যে কোন সময় নদী গর্ভে চলে যাবে। এর আগে স্থানান্তর করা হয়েছে চকরাজাপুর ও পূর্ব কালিদাসখালী এবং চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। এবছর ভাঙনের কবলে পড়ে শতশত লোকজনের বাড়িঘর, হাজার হাজার বিঘা জমিসহ আবাদি ফসল নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন, ৭ মাসে ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটে মাটি হারিয়েছে ৫শ’পরিবার। সাড়ে ৬০০শ’ একর জমি নদী গর্ভে গেছে। তার ইউনিয়নে ১২টি গ্রামের মধ্যে চকরাজাপুর, ৩ নম্বর কালিদাশখালি, লক্ষীনগর গ্রাম, আতারপাড়া নদী গর্ভে চলে গেছে। দাদপুর, পলাশিফতেপুর, নীচ পলাশি ছাড়া অন্য গ্রামগুলোও ভাঙনের কবলে পড়েছে। পাকুড়িয়া ইউনিয়নের পানিকুমড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এই ভাঙনের কবলে পড়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএফএম হাসান জানান, পরিদর্শন করে বিষয়টি অবগতির জন্য উপ পরিচালক রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন আর ১২দিন থাকলে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে চলে যাবে।

বাঘা পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ অফিসের ডিজিএম সুবির কুমার দত্ত জানান, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেড়শ’ বিদ্যুতের পুল উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, ভাঙন রক্ষায় নদী ড্রেজিং এর কাজ চলছে। শেষ হলে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে লোকজন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution