বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠ ২৪ ডটকম : মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ভারোত্তোলনে বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসে ৩টি রেকর্ড করে স্বর্ণপদক জয় করেছেন। মারিয়া টানা দুই এসএ গেমসে সোনা জয়। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের যজ্ঞ এসএ গেমসে টানা দুই আসরে সোনা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। সেই মাবিয়ার দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অলিম্পিক খ্যাত বাংলাদেশ গেমসে দাপট দেখানোটাই স্বাভাবিক। এসএ গেমসে সোনা জয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত সাফল্যের ধারা ধরে রাখলেন। বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসে সোনা জিতেছেন এই ভারোত্তোলক। গড়েছেন রেকর্ডও।
ময়মনসিংহের জিমনেশিয়ামে মেয়েদের ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৮০ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০১ কেজি মিলিয়ে ১৮১ কেজি তুলে রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশ আনসারের মাবিয়া। ২০১৮ সালে আন্তঃসার্ভিস ভারোত্তলনে ১৭৯ কেজি তুলে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন তিনি।
এ ইভেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লিমা আক্তার স্ন্যাচে ৫৯ কেজি ও ক্লিন এন্ড জার্কে ৭৩ কেজিসহ মোট ১৩২ কেজি তুলে রুপা এবং সিপাহীবাগ যুব সংঘের লাবনী আক্তার স্ন্যাচে ৫৬ কেজি ও ক্লিন এন্ড জার্কে ৬০ কেজি মিলিয়ে ১১৬ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারা শহরের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে মেয়েদের ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৮০ কেজি এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি মিলে মোট ১৮৫ কেজি ওজন তুলে সোনা জিতেছিলেন মাবিয়া।
৭ এপ্রিল বুধবার ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ছাড়াও আরও ৫টি রেকর্ড হয়েছে। নারীদের ৭১ কেজিতে সোনাজয়ের পথে ক্লিন এ্যান্ড জার্কে রেকর্ড গড়েন সেনাবাহিনীর ফারজানা আক্তার রিয়া। স্ন্যাচে ৬০ কেজি তোলার পর ক্লিন এ্যান্ড জার্কে রেকর্ড ৭৮ কেজি ভার তোলেন তিনি। সোনাজয়ের পথে মোট ১৩৮ কেজি তোলেন তিনি। রুপাজয়ের পথে স্ন্যাচে রেকর্ড ১১৭ কেজি তোলেন সেনাবাহিনীর মনোরঞ্জন রায়। ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ১৪১, মোট ২৫৮ কেজি তোলেন ২০১০ সালের এসএ গেমসে রুপাজয়ী এ ভারোত্তোলক।
ছেলেদের ৮৯ কেজিতে সোনাজয়ের পথে স্ন্যাচে রেকর্ড ১২৪, ক্লিন এ্যান্ড জার্কে রেকর্ড ১৪৯, মোট রেকর্ড ২৭৩ কেজি তুলে সোনা জেতেন আনসারের সাখায়েত হোসেন প্রান্ত।
ছেলেদের ৮১ কেজি ওজন বিভাগে সুমন চন্দ্র রায় ২৬০ কেজি তুলে সোনা জিতেছেন; স্ন্যাচে ১১৩, ক্লিন এন্ড জার্কে ১৪৭ কেজি তোলেন বাংলাদেশ আনসারের এই ভারোত্তোলন। এ ইভেন্টে ২৫৮ কেজি তুলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোরঞ্জন রায় রুপা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দূর্জয় হাজং স্ন্যাচে ও ক্লিন এন্ড জার্ক মিলিয়ে ২৪০ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
কারাতেতে অন্তরা-প্রিয়ার স্বর্ণজয়
আগের দিন কাতা একক ও দলীয় ইভেন্টে স্বর্ণপদক হাতছাড়া হয়েছিল হুমায়রা আক্তার অন্তরার। কিন্তু নিজের প্রিয় ইভেন্টে ঠিকই পদক তুলে নিয়েছেন আনসারের এই কারাতেকা। বুধবার বান্দরবানের জেলা জিমন্যাশিয়ামে অনুষ্ঠিত অ-৬১ কেজিতে স্বর্ণপদক জিতে নামের প্রতি সুবিচার করেন তিনি। একইদিনে স্বর্ণপদক জেতেন আরেক গোল্ডেন গার্ল মারজান আক্তার প্রিয়া। অ-৫৫ কেজিতে স্বর্ণপদক জয়ের পথে তিনি পেছনে ফেলেন বান্দরবানের মেসাই ওয়াংকে। এসএ গেমসে এই ইভেন্টেই সোনা জিতেছিলেন তিনি। কাক্সিক্ষত স্বর্ণপদক জিততে পেরে খুশি দুজনেই। অন্তরার কথা, ‘আগেরদিন আমার প্রিয় ইভেন্ট ছিল না। তাই দুটি রুপা পেয়েছিলাম। আমার আসল ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিততে পেরে আমি খুশি।’ প্রিয়া বলেন, ‘ধারাবাহিকতায় থাকতে পেরে আমি খুশি।’
এছাড়া পুরুষদের -৬০ কেজি কুমিতে সেনাবাহিনীর আল আমিন ইসলাম এবং পুরুষদের -৬৭ কেজি কুমিতে আনসারের জর্জিস আনোয়ার নাইম, নারীদের অ-৬৮ কেজি কুমিতে আনসারের মরিয়ম খাতুন বিপাশা, পুরুষদের অ-৭৫ কেজি কুমিতে সেনাবাহিনীর হাফিজুর রহমান স্বর্ণ এবং উর্ধ-৮৪ কেজি কুমিতে আনসারের হাসান খান সান স্বর্ণপদক জেতেন। পুরুষ ফুটবলে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন ॥ বাংলাদেশ গেমসের পুরুষ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে বুধবার ফাইনালে তারা ২-০ গোলে সিলেট জেলাকে হারিয়ে সোনার পদক জেতে। বিজয়ী দলের ইমন ও সঞ্জয় একটি করে গোল করেন।
এর আগে বিকেএসপি ৮-০ গোলে সাতক্ষীরাকে হারিয়ে ব্রোঞ্জপদক জেতে। বিজয়ী দলের পিয়াস হ্যাটট্রিক করেন। জোড়া গোল করেন মোরসালিন এবং ফয়সাল। তৌহিদুল করেন অপর গোলটি।
বিদায় বললেন ডালিয়া
২৬ বছরের হ্যান্ডবল ক্যারিয়ার থেকে বিদায় বলে দিলেন জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক ডালিয়া আক্তার। বুধবার শহীদ ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের বড় মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মাদারীপুরের হয়ে খেলা ডালিয়া, ‘গত বছরেই অবসর নিতাম। কিন্তু করোনার কারণে খেলা না হওয়ায় বিদায় বলতে পারিনি। এবার সুযোগ পেয়ে বিদায় নিয়েই ফেললাম। এতদিন খেলেছি, আর খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামা হবে না।’ ফেডারেশন থেকেও তাকে দেয়া হয়েছে বিদায়ী সংবর্ধনা। বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারে সাফল্য কম পাননি প্লে-মেকার ডালিয়া। ১২ বার হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। এছাড়া মোহামেডান, আরামবাগ, মেরিনার্স ও মাদারীপুরের হয়ে প্রিমিয়ার লীগ খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি রানার্সআপও হয়েছেন। হ্যান্ডবল খেলার পাশাপাশি ক’বছর ধরে সমানতালে কোচিংও করে গেছেন ডালিয়া। তিন বছর আগে ছেলেদের হ্যান্ডবল দলের কোচ হয়ে আলোড়ন তোলেন। ভবিষ্যত লক্ষ্য নিয়ে ডালিয়া বলেন, ‘আগে খেলার পাশাপাশি কোচিং করিয়েছি। এখন যেহেতু খেলা নেই, তাই কোচিংয়ের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চাই। যেখানে সুযোগ পাব, সেখানে হ্যান্ডবল উন্নয়নে কাজ করে যাব। জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় হ্যান্ডবলের আন্তর্জাতিক কোচেস কোর্স করেছি। ভবিষ্যতে জাতীয় দলের কোচ হতে চাই। সেটা নারী-পুরুষ যে দলেরই হোক।’
ব্যাডমিন্টনে নারী দ্বৈতে বৃষ্টি-ফাতেমার স্বর্ণজয়
বাংলাদেশ গেমসের ব্যাডমিন্টনে নারী দ্বৈতে সোনা জিতেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে সেনাবাহিনীর বৃষ্টি খাতুন ও ফাতেমা বেগম ২-০ সেটে আনসারের রেশমা আক্তার ও ঊর্মি আক্তারকে হারান।
তায়কোয়ান্দোতে সেনাবাহিনীর আধিপত্য
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেমিয়ামে বুধবার অনুষ্ঠিত তায়কোয়ান্দোতে ছিল সেনাবাহিনীর আধিপত্য। ৭টি ইভেন্টের মধ্যে তারাই জিতেছে ৫টি স্বর্ণ। নারীদের মাইনাস ৫৩ কেজিতে সেনাবাহিনীর নিগার সুলতানা, নারীদের-৪৯ কেজিতে সেনাবাহিনীর জান্নাতুল সুলতানা, মেয়েদের -৪৬ কেজিতে সেনাবাহিনীর সুমনা মুন্নী, নারীদের অনুর্ধ +৭৩ কেজিতে আনসার ও ভিডিপির আরজোমা আক্তার রোমা, পুরুষদের -৫৪ কেজিতে সেনাবাহিনীর ইমন হাসান এবং পুরুষদের -৫৮ কেজিতে সেনাবাহিনীর পারভেজ মোশররফ স্বর্ণ জেতেন।
রোলবলের দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন আনসার
বাংলাদেশ আনসার রোলবল প্রতিযোগিতায় পুরুষ ও মহিলা দুই বিভাগেই স্বর্ণ জিতেছে। পুরুষ রোলবলের ফাইনালে তারা ২-০ গোলে লেজার স্কেটিং ক্লাবকে এবং মহিলা বিভাগের ফাইনালে একই দলকে ১-০ গোলে হারায় তারা।
পুরুষ ৬০ কেজিতে বিকেএসপির আবু রায়হান শুভ, নারী ৪৮ কেজিতে আনসারের শারমিন আক্তার অন্তরা, পুরুষ ৫৫ কেজিতে সেনাবাহিনীর মমিনুল ইসলাম এবং নারী ৪৪ কেজিতে আনসারের প্রিয়াঙ্কা আক্তার স্বর্ণজয় করেন।