সোমবার, ০৮ অগাস্ট ২০২২, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার,ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম॥ দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তত হয়েছে কোরবানির গরুর হাট। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে হাটে আসছে গরু। তবে হাটগুলো পশুতে সয়লাব হলেও মিলছে না ক্রেতার দেখা। বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বুধ-বৃহস্পতি নাগাদ জমে উঠবে বেচাবিক্রি।
সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি গরুর হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরুতে ভরে উঠেছে হাট। গরুর পাশাপাশি রয়েছে ছাগল, মহিষ। হাঁকডাকে ব্যস্ত বিক্রেতারা। তবে আশানুরূপ ক্রেতা সমাগম নেই।
মোহাম্মদপুরের বসিলায় পাবনা থেকে উন্নত জাতের আটটি গরু নিয়ে এসেছেন জমির ব্যাপারী। আকারভেদে একেকটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন আড়ই লাখ থেকে চার লাখ টাকা। তবে এখনো ঊঠেনি সেই দাম।
এই গরু ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতিটা গরু বাছুর থাকার সময় কিনতে হয়। এগুলোর খাওয়া-দাওয়ার পেছনে খরচ হয় মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এছাড়া হাটে নিয়ে আসা, এখানকার খরচ, সব মিলিয়ে দাম বেড়ে যায়। হাটে ক্রেতা এখন কম, আশা করি সামনে বাড়বে।’
আরেক বিক্রেতা মোশাররফ হোসেন ১২টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। আকার ভেদে দাম চাইছেন ৭০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। ঈদের হাট জমার আগেই গরু নিয়ে আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার বেশ কয়েকটা গরু। ঈদের সময় রাস্তায় জ্যাম থাকবে, গাড়ি জ্যামে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জ্যামে আটকে গেলে গরু গাড়িতে থাকবে। গাড়িতে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকলে গরু হাঁপিয়ে যাবে। অসুস্থ হয়ে পড়বে। এসব ঝামেলা এড়ানোর জন্যই আগে চলে আসছি। এখনও বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম।‘
মূলত পশুর অতিরিক্ত দামই ক্রেতা সংকটের প্রধান কারণ। গতবারের চাইতে এবার গরুর দাম বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। গাবতলী হাটে কথা হয় গরু কিনতে আসা মিলন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোট সাইজের গরুর দাম চাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। অথচ কয়েক বছর আগেও এসব গরু ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। বড় গরুর তো লাখ টাকার নিচে ভাবাই যায় না। কোরবানি দেওয়াটাও দিনে দিনে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, আনুষাঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বাড়াতে হয়েছে। গাবতলী হাটের বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। ৫০ কেজির এক বস্তা ধানের কুড়া গত বছর ৪৫০ টাকা ছিল। এবার তা ৮০০ টাকা হয়েছে। ১১শ’ টাকা দামের ২০ কেজির এক প্যাকেট ভুট্টার ভুসির দাম এখন ১৭শ’ টাকা।
এই গরু ব্যবসায়ী বলেন, এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে প্রায় ১৩০ টাকা। শুধু মাংসের হিসাবেই এক মণে দাম পাঁচ হাজার টাকার বেশি। আমাদেরও তো চলতে হবে। সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই সব মিলিয়ে প্রভাব পড়েছে কোরবানির হাটে।
গাবতলি হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিনই হাটে গরু আসছে। স্বাভাবিক সময়ে যেসব গরু এখানে আসে, সেগুলোই আসছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম, এটা সত্য। আমরা আশা করছি, ঈদের তিন-চার দিন আগে ভালোভাবে বিক্রি শুরু হবে। এছাড়া হাটের প্রস্তুতির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কিছু জায়গায় বিদ্যুতের কাজ চলছে, দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে আশা করি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এ বছর কোরবানির হাটের জন্য গবাদিপশু সরবরাহের সংখ্যা গতবারের চেয়ে দুই লাখের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে।প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু।