শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
খুলনা প্রতিনিধি ॥ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খুলনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৮ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি নেতা শফিকুর আলম তুহিনসহ ৯২ জনের নাম উল্লেখ ও বাকীদের অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাতে খুলনা সদর থানার এসআই বিশ্বজিৎ কুমার বোস বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ১৪ জনকে আহত করা, ভাংচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকেল অনুমান ৩টার দিকে ৬নং কে ডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি চলছিল। অপর দিকে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল বিকেল ৪টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি চলছিল। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডাক বাংলো মোড় থেকে ঘুরে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে আসার সময় বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর পিকচার প্যালেস মোড় ক্রস করার সময় খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ইট পাটকেলসহ খুলনা জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পিকচার প্যালেস মোড় থেকে বিএনপি অফিস পর্যন্ত ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এ সময় টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৪ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ ৩৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ৮ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় একটি মামলা হয়।
এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, খুলনায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালালে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং ছাত্রলীগের তাণ্ডবলীলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র এলাকা। পুলিশ বিএনপি অফিসের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে এবং দলীয় কার্যালয় এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, নগর মহিলা দলের সভাপতি আজিজা খানম এলিজাসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
জানা গেছে, খুলনায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আগেই খুলনায় পৌঁছান। সমাবেশে যোগ দিতে ছাত্রদলের জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকেন।
একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মিছিল বের করেন মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকেন।
পিকচার প্যালেস মোড়ে তাদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। হামলা ভাংচুর ও সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের থেমে থেমে ইট-পাটকেল ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের অশালীন মন্তব্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৪টায় দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি দলীয় কার্যালয় হতে শুরু হয়ে পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলা, ফেরীঘাট মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফেরত আসার সময়ে মিছিলটি পিকচার প্যালেস মোড়ে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পেছন থেকে বিএনপি, যুব ও ছাত্রদল অতর্কিত হামলা চালায়।
মিছিলে গুলিবর্ষণ, বোমা ও ককটেল এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। আশপাশের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ইট-পাটকেল ও গুলতি দিয়ে কাচের খণ্ড নিক্ষেপ করে। হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ নগরীর কে ডি ঘোষ রোড, পিকচার প্যালেস মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায়। ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সদর থানার সামনে রক্ষিত দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করে। তাদের অতর্কিত হামলায় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। বিএনপি, ছাত্র ও যুবদলের হামলায় ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে এ ন্যাক্কারজনক হামলায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। অথচ পুলিশ উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকবেন।