মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ কেরানীগঞ্জে স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম ক্লিয়ার ওয়েস্ট মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমে সব ধরনের ময়লা আবর্জনা বর্জ্য নিমিষেই ছাই হয়ে যাবে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে এটি জিনজিরা ইউনিয়নের মনুবেপারীর ঢাল এলাকায় বসানো হয়েছে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এই ইকো ওয়েস্ট মেশিন থেকে বের হবে গ্রিন ওয়েস্ট বা ছাই। এই ছাই ব্যবহার করা যাবে সিমেন্ট ও ব্লক ইট তৈরিতে।
মালেশিয়ায় তৈরি এই ক্লিয়ার ওয়েস্ট মেশিনে কোনো প্রকার শব্দ ও ধোয়া তৈরি হবে না। মেশিনের টেকনোলজি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে শুধু ২ জন ব্যক্তি এটি অপারেট করতে পারেন। পরিবেশবান্ধব এই মেশিন চালাতে কেবল সীমিত পরিসরে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। মেশিনে বর্জ্য ঢোকানোর পর ৫টি ধাপে পরিশোধিত হয়ে নিমিষেই ছাই হয়ে যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, মনুবেপারীর ঢাল এলাকায় ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ-৪ এর প্রধান কার্যালয়ের পাশে ওয়েস্ট টু ক্লিন প্রকল্পের জন্য সুসজ্জিত একটি ইয়ার্ড বানানো হয়েছে। ভবনের ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে মেশিনটি। কিছুদিন আগেও এই স্থানে ছিল ময়লা আবর্জনার বিশাল স্তূপ। ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করে সেখানে স্থাপিত হয়েছে ক্লিয়ার ওয়েস্ট মেশিন।
পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে আনা হয়েছে ওই মেশিন। উদ্যোক্তারা জানান, এখানে স্থাপিত মেশিনটি দিয়ে দিনে আড়াই টন বর্জ্য ডিকম্পোজ বা রিসাইকেলিং করা যাবে। ল্যান্ডফিল্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকালে মিথাইল গ্যাসসহ দুর্গন্ধে ছেয়ে যায় যা পরিবেশ দূষণ করে। তাছাড়া ল্যান্ডফিল্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খরচও বেশি। কিন্তু ক্লিয়ার ওয়েস্ট মেশিনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খরচ অনেক কম।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয় সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা খুব ঝামেলার মধ্যে ছিলাম। বাসাবাড়ি, কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টন টন বর্জ্য নিয়ে যেখানে সেখানে ফেলা হতো। এতে রাস্তাঘাট ও পরিবেশ দূষণ হতো। ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ’ নামে একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়। কিন্তু সেটা খুবই ব্যয়বহুল। পরে আমরা মালেশিয়ায় তৈরি এই মেশিনের কথা জানতে পারি।
পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিন আড়াই টন বর্জ্য রিসাইকেলিং করা যাবে এমন একটি মেশিন এনে আমরা পরীক্ষামূলক জিনজিরাতে স্থাপন করেছি। এটা পরিবেশবান্ধব ও খরচ কম। এখান থেকে যে ছাই পাওয়া যাবে তা দিয়েই এর খরচ উঠে আসবে। তিনি বলেন, সফলতা এলে পর্যায়ক্রমে কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নে এই মেশিন স্থাপন করা হবে।
পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মোক্তাদির হোসেন বলেন, মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা ক্লিয়ার ওয়েস্ট মেশিন প্রকারভেদে দেড় কোটি টাকা থেকে ৩ কোটি টাকায় পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে এটি প্রথম কেরানীগঞ্জে স্থাপিত হয়েছে। এই মেশিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ৫টি ধাপে ময়লা আবর্জনাকে পরিশোধিত করে খুব মূল্যবানের ছাই তৈরি করে।
বর্জ্য প্লাজমা পদ্ধতির মাধ্যমে কার্বন, ইকো ফিল্টার, পানি, চক বা খড়িমাটি ও মেচের মধ্য দিয়ে রিসাইকেলিং হয় বলে এখান থেকে যে বাতাস বা ধোঁয়া বের হয়- তা নরমাল বাতাসের মতো বের হয়। এতে কার্বনের পরিমাণ নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, এই মেশিন সব ধরনের বর্জ্য বিগলিত করতে পারলেও স্টিল বা সিরামিক জাতীয় দ্রব্য পারে না। এই মেশিনে খরচ খুব কম। শুধু মাঝে মাঝে মেশিনের ফিল্টার পরিবর্তন করলেই সঠিকভাবে চলবে।