বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন

আশুলিয়ায় ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

তুহিন আহামেদ, সাভার থেকে:: সরকারি নিয়মানুসারে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির ‘টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি)’ কাটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ থাকলেও প্রায় ২০/৩০ ফুট গভীর করে ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি, গাজীখালি, ঋষিপাড়া ও নৈহাটি এলাকার ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। আর এসব নিয়ে ফেলা হচ্ছে আশপাশের ইটভাটাগুলোতে। বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় মাটি খেকুদের তান্ডব। চলে পুরো মৌসুম জুড়ে। এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার অভিযান করলেও কয়েকদিনেই ফিরে আসে পূর্বের অবস্থানে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে ফসলি জমির মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। খুব শীগ্রই পুনরায় ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে শিমুলিয়া এলাকার চিহিৃত মাটি খেকু সিন্ডিকেট বছরের পর বছর আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ইট ভাটায় বিক্রী করছে। শুধু উপরিভাগ নয় জমির ২০/৩০ ফিট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।

সরেজমিনে আশুলিয়ার শিমুলিয়ার ঋষিপাড়ার উত্তরপাশে গিয়ে দেখা যায়, একপাশে সরিষা ক্ষেত, অন্যপাশে ধান রুপণ করছে কৃষকরা, এর পাশে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটা হচ্ছে। ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ইট ভাটায়। এখানকার মাটি কেটে বিক্রি করছেন গণকপাড়া এলাকার লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তাকে মাটি খেকু হিসেবেই চিনে এলাকাবাসি। তিনি প্রথমে অল্প দামে জমির মাটি কিনে পরে ভেকু দিয়ে গভীরভাবে কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। গভীর করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিগুলোও রয়েছে ঝুঁকিতে। পাশের জমির মালিকরা কিছু বলতে পারেনা মাটি খেকুরা প্রভাবশালি হওয়ায়। আশুলিয়ার রাঙ্গামাটি এলাকায়ও চলছে কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে এই ধ্বংসযজ্ঞের সাথে রয়েছে জসিম মাস্টার, ফারুক, কহিনুর, খলিল মেম্বার ও বাদশা। এদেরকে স্থানীয়রা মাটি খেকু হিসেবে চিনেন।

এদিকে, প্রতিনিয়ত মাটির ট্রাক চলার কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। এছাড়া সড়কে ধুলা-বালির কারণে জনজীবন অতিষ্ট। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কিছই বলতে পারছে না।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার প্রবণতা ভয়ংকর এবং তা কৃষির জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে মাটি সবচেয়ে মূল্যবান। জমির উপরিভাগের ছয় থেকে সাত ইঞ্চির মধ্যেই থাকে সব ধরনের জৈব গুণাগুণ। অথচ এটাই কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফলে এসব জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এতে ফসলের উৎপাদনে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। ক্রমাগত কমতে থাকবে ফসল উৎপাদন। যার ফলে অধিক চাষাবাদেও ফলন হবে কম।

এদিকে, ২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির রণস্থল এলাকায় অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অপরাধে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারি কমিশনার ভুমি মো: আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৮জনকে এক মাসের করে কারাদন্ড প্রদান করেন।

এব্যাপারে মাটি খেকু লাল মিয়া জানান, তিনি তার ক্রয়কৃত জমি থেকেই মাটি কেটে বিক্রি করছেন। তবে ফসলি জমির মাটি কাটা ও বিক্রি দন্ডনীয় অপরাধ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ব্যবসাতো আর আমি একা করি না। অনেকেই জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে?

এব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা বিভিন্ন সময়ে খবর পাওয়ার সাথে সাথে সেখানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা শিমুলিয়াতেও ইতিমধ্যে অভিযান করেছি। এছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution