শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
সড়ক দুর্ঘটনা মানে এক একটি পরিবারের কান্না। এ কান্না কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই কোথায়ও না কোথায়ও সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুর খবর আমরা দেখি।প্রায় শুনি একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের কান্না, তার শিকার সাধারণ মানুষ, পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিটি। সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করছে অগণিত মানুষ। এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়ে, বছরের পর বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা ফুলের মতো সাজানো সংসার মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সারা জীবনের সব স্বপ্ন মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই একটি দুর্ঘটনা মানে স্বজন হারানো মর্মস্পর্শী বেদনা, যার বোঝা বইতে হয় সারা জীবন। স্বজন হারা মানুষের বুকফাটা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে আর মানবতা করে হাহাকার ।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আসমা বেগম কান্নআ জড়িত কণ্ঠে বলেন- সকাল ৮টার দিকে তিনি (আলমগীর) বাসা থেকে বের হন ৷ বাস যোগে উপজেলা শহর থেকে জেলা শহরে যাবার পথে সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হন। একটি বিকট শব্দে বাসটি স্ট্যারিং কেটে রাস্তার পাশে মেহগনী গাছের সাথে ধাক্কা খাই । কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই (তৎক্ষনাৎ) দুইজন পাড়ি জমাই না ফেরার দেশে। পরবর্তিতে ১১ জন মারা যায়। মোট মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ জনে। আর যারা বেঁচে ছিলেন তাদের ভিতরে সব থেকে বেশি আহত হন আলমগীর।
ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালে গেলেই ভেসে আসে ব্যথায় কাতর রোগীদের গোঙানি আর স্বজনের কান্নায় করুণ আর্ত্বনাদ। বারান্দায় পড়ে আছে নিথর দেহ। বাবা, বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয়, স্বজন সবাই ছুটে এলো। সকলের ধারণা মৃত্যু নিশ্চিত। তবুও শেষ চেষ্টা। আসমা বেগম সেই দিনটির ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলছিলেন, “প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় । কিন্তু সেখানে রাখে নাই। ডাঃ বলছেন ঢাকায় নিয়ে যান। ওর অবস্থা মারাত্মক! মাথায় ভীষণ আঘাত ! ভীষণ রক্ত বের হচ্ছে। আলমগীরকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলেছে ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যেই ত্রিশের অধিকবার ছড়ায় মৃত্যু সংবাদ। মৃত্যু নিশ্চিত যেনে বাবা মাকে কেও সাথে আনেননি। বাড়িতে তখন পড়ে গেছে কান্নার রোল । পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান আলমগীর। ঢাকায় নেয়ার সময় গাড়িতে কাঁথা কাপড় যা ছিলো সব রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখার মত ছিল না।
বাড়িতে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। বিবাহের বয়স মাত্র ২ মাস। ঢাকা মেডিকেলে মাথা, ডানহাত, বামহাত, ডান চোয়াল অপারেশন করা হয়। ডাক্তারগণ অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের ধারণা রোগিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। আর বাঁচলেও পাগল হয়ে বাঁচবে। ডান চোখে তো দেখাই সম্ভব হবে না। কিন্তু না ! সকলের ধারণা ভুল করে দিয়ে, দুই দিন পরে আবার চোখ মেলে আলমগীর । মহান আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দেন। আল্লাহর রহমত, মানুষের ভালোবাসা, দোয়া তাকে আবার দিয়েছে নতুন চলার পথ। প্রমাণিত হয় আল্লাহ চাইলে মানুষ বাঁচতে পারে, নহেত নয়। দীর্ঘ দুই বছর বিভিন্ন অপারেশন চিকিৎসার পরে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আলমগীরের পরিবার ২০০৬ সাল থেকে ২০২১ এখনও পর্যন্ত চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে। খেয়ে না খেয়ে কাটছে দিন। মাথা গোঁজার ঠাঁই মাত্র ৭ শতক জমির উপরে ২টি মাটির ঘর ছাড়া জাগতিক সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই। তাদের দেখার কি কেউ নেই?
১৯৯৬ সাল থেকে ছাত্র অবস্থায় এলাকায় টিউশনির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন । শিক্ষক স্বল্পতায় ফুলস্টপ গ্যাপে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ বছর শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো বিকশিত করতে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করেন । বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০০৫ সালে খ-শাখায় গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়ে ২০১২ সালে ক-শাখায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া ১৯৯৮ সালে দৈনিক আজকের কাগজে লেখালেখির মাধ্যমে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ২০০৩ সালে “একদিন” শিরোনামে ১৫৫৫ লাইন বিশিষ্ট ৫২ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ ইসলামীক ধাঁচের কবিতা লেখেন, যে রিপোর্ট দৈনিক ‘প্রথম আলো’ সহ বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ভাসতে থাকেন প্রশংসার জোয়ারে।১৯৯৮ সালে লেখালেখি শুরু করে এযাবৎ তিনি ছয় শতাধিক গান, ছড়া-কবিতা, খন্ড নাটক, ধারাবাহিক নাটক লিখেছেন। এছাড়া বেশকিছু গবেষণাধর্মী বই, উপন্যাস, কবিতার বই, ছড়ার বই, জীবনী, ছোট গল্প, উপন্যাস রচনা করেন।
২০১৪ সালে অনলাইন ও আইপি টিভিতে যোগদান করে, এরপরে ২০১৯ সালে অনলাইন মিডিয়া থেকে অবসর নিয়ে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি সরকার অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠিত স্যাটেলাইট টিভিতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। করোনাকালিন কঠিন পরিস্থিতিতে বেতন পাচ্ছেন খুবই কম । মাস শেষে বেতন যা পান তা দিয়ে ঢাকাতে নিজের চলা, বৈবাহিক জীবনে সংসার সামলানো খুব কঠিন হয়ে যায়। তাই আর কোন কিছু করা হয়নি।
মিডিয়া মানেই একটি রঙিন দুনিয়া। এই রঙিন জগতে টাকা পয়সা উড়ে বেড়ায়। ইচ্ছে করলেই মাসে লক্ষ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। কিন্তু তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। দীর্ঘকাল মিডিয়াতে কাজ করলেও নেশা দ্রব্য গ্রহণ দূরের কথা সিগরেট পর্যন্ত স্পর্শ করেননা। এক সময় যে আলমগীর নাম যশ খ্যাতির পেছনে দৌঁড়িয়েছে, আজ সেই আলমগীর সব কিছু হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও কিছুই করতে পারছেনা। পরকালীন ভয়, কবরের ভয় তাকে কিছুই করতে দেয়নি। ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকতে তিনি এই রঙিন মিডিয়া জগৎ ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু তারও সংসার আছে, মাস শেষে কিছু খরচ আছে। এই কারণে তিনি কিছুই করতে পারছেন না। তার ইচ্ছা কিছু নগদ অর্থ পেলে গ্রামে ফিরে গবাদিপশুর খামার, কৃষিকাজ করে হালাল পথে বাকি জীবন পার করবেন। কয়েক বছর আগে তিনি আনসার ভিডিপি ট্রেনিং সহ সরকারী ভাবে গরু মোটাতাজা করণ ট্রেনিং নিয়েছেন।
তিনি নিজে কিছু করতে চান। নিজের সাথে নিজে একটা চ্যালেঞ্জ নিতে চান। আবার শুরু করতে চান নিজের মত করে। তিনি মনে করেন গবাদিপশু খামার করে সততা, পরিশ্রম ও আল্লাহর অনুগ্রহ থাকলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব এবং অনেকের বেকারত্ব জীবনের অবসান ঘটানো সম্ভব। পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহ প্রেমী ধনাঢ্যদের কাছে সাহায্যের আবেদন ।
আপনাদের বিন্দু পরিমাণ সহযোগিতায় তিনি হতে পারবেন একজন উদ্যোক্তা। প্রয়োজনে তার বাড়ির দলিল অর্থদাতার নিকট জমা রাখতে রাজি আছেন, যতদিন ঋণ শোধ না হয়। আবার কেউ যদি ফিফটি-ফিফটি শেয়ারে গবাদি পশু খামার করতে চান, তাতেও তিনি রাজি আছেন। সামনে ঈদুল ফিতর, কেউ যদি তাকে যাকাতের টাকাও দেন তবুও তিনি নিবেন। কর্জে হাসানার দিকেই তার আগ্রহ বেশি। আসলে তিনি চাচ্ছেন এই পাপের জগৎ-টা ছেড়ে দিতে। কোন সুহৃদয়বান ব্যক্তি কি নেই? যিনি একটু সহযোগিতা করবেন? আপনি আপনার সাধ্য মত হাত বর্ধিত করুন। তার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার হচ্ছে – মোঃ আলমগীর হোসেন, ঢাকা ব্যাংক – 20 62 75 00 70 40 8 ।
মানুষের পক্ষে একাকী বাস করা সম্ভব না। বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য ছাড়া মানুষ চলতে পারেনা। যারা বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যকারী হয়, তারাই প্রকৃত ঈমানদার। দুনিয়ার সব সম্পদের মালিক আল্লাহ। মানুষ যে সম্পদের অধিকারী, তা মূলত আল্লাহর দান । আল্লাহ যাকে অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন তিনি সে সম্পদ থেকে অভাবী মানুষকে সাহায্য করলে আল্লাহ খুশি হন। এ ধরনের মানবিক কর্তব্য পালন রাত জেগে অবিরাম নফল নামাজ, রোজার সমতুল্য। যারা বিপদগ্রস্ত ও গরিব-দুঃখীকে দান করেন, আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত –রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি (আমার অভাবী বান্দাদের জন্য) নিজের উপার্জন থেকে খরচ কর, আমি আমার ভাণ্ডার থেকে তোমাকে দিতে থাকব। -(সহিহ বোখারি) সৃষ্টি জগতের সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ।
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। যখন কোনো মানুষের বিপদে সাহায্য করা হয়, তখন আল্লাহকেই খুশি করা হয়। সমাজের আশ্রয়হীন, দুর্বল ও অসহায় লোকজনের সাহায্য-ইবাদতেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিপদগ্রস্ত ও অভাবী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার এবং তাদের অভাবের দিনে হাত বাড়ানোর তওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক ও কলামিস্ট মোঃ এ. হোসেন । ই- মেইল ekontho@gmail.com. মুঠো ফোন 01831846058